বৃহস্পতিবার । ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২১শে কার্তিক, ১৪৩২
পাঁচ বছরে মুনাফা ১৪৮ কোটি টাকা

দ্যূতি ছড়াচ্ছে খুলনার ক্যাবল শিল্প লিমিটেড

একরামুল হোসেন লিপু

খুলনার খানজাহান আলী থানার শিরোমণি শিল্প এলাকার ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তার শিল্প কারখানা বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড। এটি দেশের শতভাগ উৎপাদনমুখী ও লাভজনক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত টেলিকম কপার ক্যাবল দেশের শতভাগ চাহিদা পূরণ করছে। দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যখন ধুঁকছে, তখন ক্যাবল শিল্প লিমিটেড গত ৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছে ১৪৮ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মানের উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনার পাশাপাশি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ওয়াসার উপযোগী এইচডিপিই/এইচডিডি পাইপ উৎপাদনের নতুন মেশিন স্থাপন, ইন্টারনেট ও ল্যান নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত ল্যান ক্যাবল প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে দেশের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ চাহিদা পূরণের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে অবদান রাখতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া আগামী পাঁচ বছরে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল প্লান্টে আরও তিনটি নতুন মেশিন সংযোজনের মাধ্যমে বার্ষিক উৎপাদন ২০ হাজার কিলোমিটার থেকে ২৫ হাজার কিলোমিটারে উন্নীতকরণ, এইচ ভিপিই টেলিকম ডাক্ট প্লান্টে আরও দু’টি নতুন মেশিন সংযোজনের মাধ্যমে সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার থেকে ৮ হাজার কিলোমিটারে উন্নীতকরণ এবং সুপার এনামেল কপার ওয়্যার উৎপাদন প্লান্টে ৩০০ মেট্রিক টন থেকে উৎপাদন সক্ষমতা ৬০০ মেট্রিক টনে উন্নীত করার কর্মপরিকল্পনার একটি রোড ম্যাপ তৈরি একই সঙ্গে আগামী বছরের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব অর্থায়নে রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপন করে সেটি চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকার ও পশ্চিম জার্মানির মেসার্স সিমেন্স এজি’র সাথে যৌথভাবে পাবলিক লিমিটেড হিসেবে ৩২ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে টেলিযোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত কপার ক্যাবল উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। এরপর পণ্য বিকেন্দ্রীকরণ হিসেবে ২০১০ সালে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, ২০১৬ সালে এইচভিপিই টেলিকম ডাক্ট এবং ২০১৯ সালে বৈদ্যুতিক ওভারহেড কন্ডাক্টর ও ক্যাবল উৎপাদন প্লান্ট স্থাপন করা হয়।

প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) এনামুল হক খুলনা গেজেটকে বলেন, “বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেডে উৎপাদনের জন্য আমদানিকৃত কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট ও এম আইএসটি হতে পরীক্ষিত।” এখানে উৎপাদিত পণ্যসমূহ সেরা হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার মত উন্নত রাষ্ট্র হতে আমদানিকৃত ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কপার রডের ব্যবহার, মালয়েশিয়া চীন ও ভারত হতে আমদানিকৃত ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম রডের ব্যবহার, চীন ও ভারত হতে আমদানিকৃত বিশ্বমানের পিডিসি, স্টিল কোর ওয়্যারের ব্যবহার এবং বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড অনুসরণ করে পণ্যের মান নিশ্চিতকরণ করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “কমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র বিবেচনায় নিলে দেশে পাঁচ লাখ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দেশে কেবল দেড় লাখ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে। আবার বিদ্যমান নেটওয়ার্কের ৭৫ শতাংশই ওভারহেড নেটওয়ার্ক, যা বিভিন্ন দুর্যোগের সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে মানসম্মত ও কম ঝুঁকিপূর্ণ রাখতে সংযোগগুলোকে মাটির নিচে দিয়ে নেওয়া দরকার। আবার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবাখাতের পুরানো ক্যাবল নেটওয়ার্ককে একক ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল নেটওয়ার্কের অধীনে আনা এখন সময়ের দাবি। তাই বাংলাদেশে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল শিল্পের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।”

প্রসঙ্গত, গত ২১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে এসে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছিলেন, “পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন গ্রহণ হলে এখানকার উৎপাদিত পণ্যগুলোর ব্রান্ড ভ্যালু বাড়বে।”

এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) এনামুল হক বলেন, “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আমরা পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক সনদ প্রাপ্তির কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করি শর্তগুলো পূরণের মাধ্যমে দ্রুতই আমরা সনদ প্রাপ্তিতে সক্ষম হব ইনশাল্লাহ।”

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন